Monday, August 1, 2016

রেসিপিঃ ছাগল/খাসির মাংসের ঝোল




ছাগল বা খাসির মাংসের স্বাদ অতুলনীয়। চর্বি ও একটা বিশেষ ঘ্রানের কারনে অনেকেই খেতে চান না তবে খাসির মাংসের বিরিয়ানী পেলে চুপে চুপে খেয়ে নেন! হা হা হা হা… লোভ সামলানো মুস্কিল! অবশ্য দামের কারনে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো চাইলেও এখন খেতে পারে না! ধনী পরিবারে খাসির গোসত অপরিহার্য! আমি নিজেও এক সময়ে অনেক ছাগল/খাসির গোসত খেয়েছি, এখন আর পাই না তাই খাই না! যাই হোক, রেসিপি লিখা ও রান্না শেখার পর বেশ কয়েকবার খেয়েছি। আজ দুপুরে আবার সুযোগ হল, খাসির গোসত রান্না করার। আপনাদের না দেখিয়ে শান্তি পাচ্ছি না!
আমি একটু ঝোল বেশি রেখেছি বলে, এর নাম দিয়েছি খাসির মাংসের ঝোল। আগেই বলে নেই আপনারা চাইলে ঝোল কমিয়ে নিতে পারেন। আর একটা কথা না বললেই নয়, দুনিয়ার যত দেশে ছাগল পাওয়া যায় কোথায়ও আমাদের দেশের মত ছাগলকে বিচি ফেলে খাসি করিয়ে দেয়া হয় না! এটা আমাদের দেশেই করা হয় এবং যে কোন ছাগল জবাই করে গোসত বিক্রির সময় বলা হয়, খাসি! ব্যাপারটা ছাগল সমাজের জন্য যেমন বেদনাদায়ক, আমাদের জন্য দুঃখজনক! চলুন দেখে ফেলি।



উপকরন ও পরিমানঃ
– খাসির গোসত, কেজি খানেক হাড় গোড় সহ
– কয়েকটা পেঁয়াজ কুঁচি
– এলাচি, ৩/৪ টা
– দারুচিনি, ৪ টুকরা (হাফ ইঞ্চি)
– জয়ফল বাটা (১টা ফল ১০ কেজির জন্য ব্যবহার হয়) সামান্য
– জয়ত্রী, সামান্য এক চিমটির মত
– সরিষা, ২ চা চামচ (বাটা বা গ্রাইন্ড করা) * সরিষার জন্য স্বাদ বেড়ে যায় অনেক গুন
– আদা বাটা, ২ টেবিল চামচ (ইন্ডিয়ান, দেশী হলে একটু কম হলেও চলবে)
– রসুন বাটা, ৩ টেবিল চামচ
– ধনিয়া গুড়া বা বাটা, ১ চা চামচ
– লাল মরিচ গুড়া, হাফ বা সামান্য বেশী চা চামচ, ঝাল বুঝে
– হলুদ গুড়া, এক চা চামচ
– কয়েকটা আস্ত কাঁচা মরিচ
– পরিমান মত লবন/পানি
– তেল পনে এক কাপ (তেল কম দিয়েই খাসির গোসত রান্না করা উচিত, কারনে গোসতের চর্বি থেকেও তেল বের হয়)

প্রনালীঃ 

খাসির গোসত সামান্য গরম পানিয়ে ভাল করে ধুয়ে নেয়া প্রয়োজন। অনেকে এটা করেন না, অবশ্য না করলে নাই। আমি করে থাকি কারন এতে কিছু চর্বি ঝরে যায় এবং ঘ্রাণও কিছুটা কমে।

এবার কড়াইতে তেল গরম করে হাফ চামচ লবন যোগে পেঁয়াজ, দারুচিনি, এলাচি ভাঁজুন। পেঁয়াজ কুঁচি নরম হয়ে হলদে হয়ে যেতে দিন।

একটা বাটিতে সামান্য পানি দিয়ে নিন্মের (উপরেও উল্লেখ করা হয়েছে) মশলা গুলো মিশিয়ে নিন।
– জয়ফল বাটা (১টা ফল ১০ কেজির জন্য ব্যবহার হয়) সামান্য
– জয়ত্রী, সামান্য এক চিমটির মত
– সরিষা, ২ চা চামচ (বাটা বা গ্রাইন্ড করা) * সরিষার জন্য স্বাদ বেড়ে যায় অনেক গুন
– আদা বাটা, ২ টেবিল চামচ (ইন্ডিয়ান, দেশী হলে একটু কম হলেও চলবে)
– রসুন বাটা, ৩ টেবিল চামচ
– ধনিয়া ১ চা চামচ
– লাল মরিচ গুড়া, হাফ বা সামান্য বেশী চা চামচ, ঝাল বুঝে
– হলুদ গুড়া, দেড় চা চামচ

এবার মশলা মিক্সটা কড়াইতে ঢেলে দিন এবং ভাল করে মিশিয়ে নিন। প্রয়োজনে আরো এক কাপ পানি দিয়ে দিন।

কয়েকটা কাঁচা মরিচ আস্ত দিয়ে দিন এবং ভাল করে কষিয়ে তেল উঠিয়ে নিন। মশলা কষিয়ে মশলার কাঁচা ঘ্রান তুলে নিতে হবে। এখানে একটু ধৈর্য ধরতে হবেই।

এবার খাসির গোসত দিয়ে দিন এবং ভাল করে মিশিয়ে নিন।

মাধ্যম আঁচে ঢাকনা দিয়ে মিনিট ৩০ রাখুন। মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে হবে।

এই রকম একটা অবস্থায় এসে যাবে।

এবার আরো দুই কাপ গরম পানি (নরমাল হলেও চলবে) বা ঝোল চাইলে আরো বেশি পানি দিয়ে দিন।

এবার আবারো ঢাকনা দিয়ে অল্প আঁচে মিনিট ২০ রাখুন। মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দেবেন। গোসত নরম হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এবার ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন না লাগলে ওকে। লবন পরিমান মত হওয়া একটা জরুরী ব্যাপার। লবন কম হলে বিরত্তিকর, আর বেশি হলে রান্নাকারীর দফারফা হয়ে পড়ে। তাই এটা মনে রাখতে হবে। শুরুতে এইজন্য কম দিয়ে শুরু করা উচিত কারনে এখানে এসে আপনি ফাইন্যাল লবন দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।

হাড়ি সহ খাবার টেবিলে তুলে দিতে পারেন, বিশেষ করে ব্যচেলর এবং প্রবাসী ভাই বোনদের জন্য এটা করা যেতেই পারে! এত সময় কোথায়, ফ্যাশন দেখাতে গিয়ে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না! হা হা হা…

ভদ্র পরিবেশনা! হা হা হা…।

বিশ্বাস করুন, চরম মজাদার হয়েছিল। আমার রান্না টেষ্টার বুলেট এটা এতই পছন্দ করেছে যে, আমাকে বলল রাতেও সে এই খাসির গোসত দিয়ে ভাত খাবে।
রান্না একটা ভালবাসা, আপনার প্রিয়জনদের নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ান, দুনিয়াতে এর চেয়ে আর কি আনন্দ হতে পারে। ছেলেদের রান্না জানা জরুরী এবং এটা একটা বিশেষ আনন্দ! নিঃসন্দেহে আমি অনেকের চেয়ে আমার স্ত্রী তথা আমার ব্যাটারী থেকে বেশী ভালবাসা পাই, যদিও তিনি এটা মাঝে মাঝে ভুলে যান!!
সবাইকে শুভেচ্ছা।

No comments:

Post a Comment