Tuesday, July 26, 2016

রেসিপিঃ চিকেন দম বিরিয়ানী


চিকেন দম বিরিয়ানী! আমার মতে দুনিয়ার সব চেয়ে সহজ রান্না! এই দম বিরিয়ানীর রান্না আমি ইংল্যান্ডের টেকওয়ে সহ ভারতের অনেক শহরে রাস্তায় দেখেছিলাম মানে ছোট ছোট হোটেল বা দোকানে এই রান্না হয়, একটু চওড়া পাত্রে খুব কম সময়ে এই রান্না করা হয়ে থাকে! বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে এমন রান্না হয় না তবে আমি মনে করি এই রান্না নিয়ে কেহ বসতে পারলে এবং গরম গরম প্যাকেট বা বাটিতে সাপ্লাই করতে পারলে কেল্লা ফতে হয় যেত! আজকাল আমাদের দেশে যে খাবার দাবারের ট্র্যাডিশন গড়ে উঠছে তাতে এই রান্না নিজে খোলা বা উন্মক্ত স্থানে নিয়ে বসতে পারলে একটা আলাদা স্থান দখল করে উঠতে পারবে!
চলুন কথা কম বলে রান্না দেখে ফেলি যদিও এমন বিরিয়ানী রান্না আগেও অনেকবার দেখিয়েছি। এবারের মত এত সহজ আর দেখাতে পারি নাই। বাসমতি চাল দিয়ে এই বিরিয়ানী রান্না করা হয়েছে, আমাদের দেশি কালিজিরা দিয়েও চাইলে আপনি এই রান্না করতে পারেন, ব্যাপার না! এই রান্নায় ফার্মের মুরগী ব্যবহার করা হয়েছে, দেশী মুরগী দিলে সময় এবং আগুনের তাম একটু বাড়িয়ে দিতে হতে পারে। চলুন দেখে ফেলি!

কয়েকটা ধাপ মনে রাখতে পারলে এই রান্না তেমন কিছু নয়!
১। মশলা পাতি যোগাড় করে হাতের কাছে নেয়া এবং মিশ্রন
২। চাল প্রিপারেশন
৩। তাপে দম দেয়া


উপকরণ ও পরিমাণঃ
মেইন আইটেমঃ
– বাসমতী চাল (ভারতীয় হলে ভাল)
– চিকেন (সদ্য হলে ভাল হয়)
গরম মশলা মিক্সঃ (মশলা গুলো সামান্য ভেঁজে গুড়া করে নিতে হবে)
– এলাচি
– দারুচিনি
– জয়ত্রী
– জয়ফল
– লবঙ্গ বা লং
– গোল মরিচ
– শাহ জিরা
মশলাপাতি ও ভেজষঃ
– আদা
– রসুন
– জিরা
– মরিচ গুড়া
– দই
– বেরেস্তা (এটা আগেই বানিয়ে নিতে পারেন)
– দুধ (হাফ কাপ, খাবারের রং মিশিয়ে নিতে হবে)
সাধারন আইটেমঃ
– তেল
– লবন
– পানি
– কাঁচা মরিচ
– ধনিয়া পাতার কুঁচি
– পুদিনা পাতার কুঁচি
অন্যান্যঃ
– কেওড়া জল
– কয়েক ফোটা খাবার রং (ভাল মানের)


প্রনালীঃ (ছবি কথা বলে)
মশলা পাতিঃ

ছবি ১, গরম মশলা সামান্য ভেঁজে গুড়া বা চেঁছে নিতে পারেন।

ছবি ২, মশলা গুলো হাতের কাছে নিয়ে নিলে রান্নার সময় এবং রান্না ভাল হয়! (ছবিতে অনেক মশলাপাতি দেখানো যায় নাই)

ছবি ৩, বেরেস্তা কি করে করতে হয় এই পোষ্টে দেখে নিতে পারেন। সকল স্বাদের কাজী!
চিকেন প্রিপারেশনঃ

ছবি ৪, এই বিরিয়ানী রান্নায় ফার্মের মুরগীই ভাল চলবে। পিস আপনি কেমন রাখবেন তা নিজেই নির্ধারন করে নিতে পারেন।
চিকেন ও মশলার মাখামাখিঃ

ছবি ৫, চিকেনে লবন সহ একে একে সব মশলা দিয়ে যেতে থাকুন।

ছবি ৬, পুদিনা ও ধনিয়া পাতার কুঁচি দিতে ভুলবেন না।

ছবি ৭, টক দই দিন।

ছবি ৮, ভাল করে মিশিয়ে নিন।

ছবি ৯, এবার তেল দিন। মিশিয়ে নিন।

ছবি ১০, বেরেস্থা দিন এবং মিশিয়ে নিন।

ছবি ১১, মিশিয়ে নেয়ার পর কিছু সময় রাখুন, ম্যারিনেট বলা যেতে পারে।
এবার চাল প্রিপারেশনঃ

ছবি ১২, এই রান্নায় দুই চুলা হলে ভাল (এক চুলায়ও রান্না হতে পারে)। বেরেস্থা করার সময় অন্য চুলায় পানি গরম করে নিন। বেরেস্থা হয়ে গেলে চুলায় (আগুন বন্ধ করে) ম্যারিনেট করে রাখা মুরগী রাখুন এবং অন্য চুলায় চাল রান্না করুন।

ছবি ১৩, চুলায় গরম পানিতে বাসমতি চাল (ধুয়ে রাখা) দিন।

ছবি ১৪, চালের তুলনায় পানি অনেক বেশী হবে, এই পানিতে লবন দিন। লবন একটু বেশি দিতে হবে, কারন চাল কিছুটা লবনাক্ত হতে হবে।

ছবি ১৫, এবার আগুন বাড়িয়ে ঢাকনা দিন।

ছবি ১৬, চাল আধা সিদ্ধ হতে দিন।

ছবি ১৭, একবার ফুটে উঠলেই আধা সিদ্ধ হয়ে যাবে, এবার আগুন কমিয়ে দিন এবং দুই চুলার ব্যবহার করুন।
মুল রান্না ও দুই চুলার ব্যবহারঃ

ছবি ১৮, পাশাপাশি রাখা দুই পাত্র এভাবে রাখুন। গোশতের চুলায় আগুন থাকবে না, চালের পাত্রে আগুন থাকবে।

ছবি ১৯, এবার হাফ সিদ্ধ চাল গোশতের পাত্রে ছিটিয়ে দিতে থাকুন।

ছবি ২০, এভাবে চালের পাত্র থেকে পানি ঝরিয়ে চাল উঠিয়ে নিন এবং গোশতের পাত্রে দিন।

ছবি ২১, এভাবে চালের লেয়ার করে দিন।

ছবি ২৩, এই লেয়ার হাফ সিদ্ধ চালের।

ছবি ২৪, এবার কিছু বেরেস্থা এবং কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিন।

ছবি ২৫, এক কাপ গরম পানি (চাউল থেকে নেয়া) ছিটিয়ে দিন।

ছবি ২৬, এবার একটু বেশি ফুটানো চাল দিয়ে আর একটা লেয়ার করুন।

ছবি ২৭, মানে দাড়ালো উপরের চাল গুলো একটু বেশি ফুটানো।

ছবি ২৮, এবার দুধে খাবারের রং (ভাল মানের রং, যদিও খাবারে রং দেয়া আমি পছন্দ করি না, তবুও এই রং সারা দুনিয়াতে ব্যবহার হয় বলে কিছুটা ব্যবহার করলাম, আপনার ইচ্ছা না হলে রং বাদ দিতে পারেন, বিরিয়ানীর রং সাদা হবে এই তো মাত্র!) মিশিয়ে তা ছিটিয়ে দিন।

ছবি ২৯, আর একটু বেরেস্থা দিন।

ছবি ৩০, ঢাকনা দিন (যাতে তাপ বের না হয়) এবং চুলায় আগুন দিন, আগুন বাড়িয়ে দিতে পারেন তবে তা বেশি সময়ের জন্য নয়।

ছবি ৩১, এক চুলায় রান্না চালিয়ে অন্য চুলায় দম দেয়ার জন্য (এটা আমাদের দেশি দম!) একটা তাওয়া গরম করুন।

ছবি ৩২, চালের উপর ধোয়া বের হলেই তাওয়ায় নিয়ে চলুন।

ছবি ৩৩, এবার তাওয়ার উপর মিনিট ২০ রাখুন। আগুন কম আঁচে থাকবে। চালের উপর ধোঁয়া দেখে রান্না বুঝা যায়।

ছবি ৩৪, চালের অবস্থা দেখেই বুঝে যাবেন, হয়ে গেল কি না! এই বিরিয়ানী নাড়িয়ে মিশানোর দরকার হয় না। নীচের লেয়ারের চিকেন হয়ে উপরের দুই লেয়ারের চাল রান্নাও হয়ে যায়।

ছবি ৩৫, এবার নীচ থেকে সাইড দিয়ে চিকেন তুলে দেখুন! বাহ!

ছবি ৩৬, পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। মেহমান বা নিজে খেয়েই বলতে হবে, ওয়াও!

ছবি ৩৭, দারুণ, স্বাদের কথা কি বলবো! না খেলে কি খাবারের স্বাদ বোঝা যায়! হা হা হা…


ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা নিন বন্ধুরা। আশা করি আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন। তবে এই রেসিপিতে একটু বেশি ছবি দিয়েছি বলে ‘সরি’। আরো কম ছবি দিয়ে রান্না বুঝানো যেত, তবুও মনে হল ছবি দিয়ে আরো খোলাসা করে দেই!
সবাইকে শুভেচ্ছা।

No comments:

Post a Comment